জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (৩০ সেপ্টেম্বর ১২০৭ – ১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩) যিনি জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী, মাওলানা রুমি, মৌলভি রুমি নামে তবে শুধু মাত্র রুমি নামেও পরিচিত | রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের “সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি” এবং “সর্বাধিক বিক্রীত কবি” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৩শ শতাব্দীর একজন ফার্সি সুন্নি মুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিয়বাদী এবং সুফী ছিলেন।
রুমি ফার্সি ভাষী মাতাপিতার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তারা বর্তমান আফগানিস্থানের বালখের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি হয় ওয়ালখ্স যা বৃহৎ বালখ্ সাম্রাজ্যের বালখ্স নদীর কাছে একটি গ্রাম যেটি বর্তমানে তাজাকিস্তান, অথবা বর্তমান আফগানিস্থানের বালখ্ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বৃহৎ বালখ্ তখন ছিল ফার্সি সংস্কৃতি সুফি চর্চার কেন্দ্রবিন্দু, যা বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। রুমির পিতা ছাড়াও রুমির উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছেন তখনকার ফার্সি কবি আত্তার এবং সানাই। রুমি তাদের গুণগ্রাহিতা করেছেনঃ “আত্তার হচ্ছে আত্মা, সানাই হচ্ছেন তাঁর দু’চোখ, এবং এরপরে আমরা তাঁদের লাইনে এসেছিলাম” এবং আরেকটি কবিতাতে স্মৃতিচারণ করেছেন “আত্তার ভালবাসার সাতটি নগরই ভ্রমণ করেছেন আর আমি এখনও একটি গলির প্রান্তে অবস্থান করছি”। তার পৈতৃক দিক থেকে তিনি নাজিম উদ্দিন কুবরা এর বংশধর ছিলেন। তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় রুম সালাতানাত এর পারস্যতে কাটিয়েছেন। যেখানে তিনি তার কাজ রচনা করেছেন এবং ১২৭৩ ঈসায়ীতে ইন্তেকাল করেছেন। তাকে কোনিয়ায় সমাহিত করা হয় এবং সেটি এখন একটি তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে। রুমির মৃত্যুর পর তার ছেলে সুলতান ওয়ালাদ এবং তার অনুসারীরা “মৌলভী ক্রম” স্থাপন করে, এটিকে ঘূর্ণায়মান দরবেশও বলা হয়, যেটি সুফী নৃত্যে “সামা” এর জন্য বিখ্যাত। তাকে তার পিতার কাছে শায়িত করা হয় এবং তার দেহাবশেষ এ একটি জমকাল দরগাহ নির্মাণ করা হয়। শামস উদ্দিন আহমদ আফলাকী এর “মানকিব উল-আরিফিন”(১৩১৮ এবং ১৩৫৩ এর মধ্যে লেখা)তে এর বিস্তারিত রয়েছে। এই ঐতিহাসিক জীবনীগ্রন্থকে অত্যন্ত মূল্যবান বলা হয় কারণ এতে রুমি সম্পর্কে কিংবদন্তি এবং সত্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ,ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো এর প্রফেসর ফ্রাঙ্কলিন লুইস এর লেখা রুমি এর জীবনী গ্রন্থে ইহা সম্পর্কে আলাদা একটি অধ্যায় রয়েছে।

“মাওলানা রুমি রিভিউ” (আইএসএসএন ২০৪২-৩৩৫৭)বার্ষিকভাবে প্রকাশিত হয় এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি এবং ইরানি চর্চা কেন্দ্র থেকে সাইপ্রাসে র নিকোশিয়া র রুমি ইনস্টিটিউট এবং ক্যামব্রিজের আর্কেটাইপ বুকস এর সহযোগিতায়। প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে এবং এরপর থেকে প্রতি বছর এটি প্রকাশ করা হয়। সাময়িকীটির প্রধান সম্পাদক লিউনার্দ লিওশিন এর মতেঃ “গুরুত্ব এবং ফলাফল এ দান্তে, শেকসপিয়র এবং মিল্টন এর যদিও কয়েকজন মুসলিম কবি সহজ প্রতিদ্ধন্ধী, পশ্চিমে তারা সাহিত্য খ্যাতি উপভোগ করে কারণ আরবি এবং ফার্সি দার্শনিক, লেখক এবং কবিদের নগণ্য, তুচ্ছ এবং রুচিহীন হিসাবে দেখে ওয়েস্টার্ন ক্যাননের মহা আখ্যানের কাছে। মাওলানা রুমি রিভিউ এর লক্ষ হচ্ছে বিশ্ব সাহিত্যে এসব তাচ্ছিল্যপূর্ণতার অবসান ঘটানো, যেটি পশ্চিমা সাহিত্যের ভুল কল্পনার চেয়েও আরও গভীর।”
0 Comments